কমলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, কমলা হচ্ছে এমন একটি ফল, যা শরীরের বদ কলেস্টেরল কমিয়ে ভালো করেস্টেরল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এবং কোলেস্টেরল স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণে রাখে। ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়মিত কমলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। প্রিয় পাঠক তাহলে আসুন জেনে নিই কমলার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ, এবং কমলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।টক মিষ্টি এবং রসালো জাতীয় ফল কমলা, অধিকাংশ মানুষই কমলা খেতে ভালোবাসে। কমলালেবুর অনেক উপকারিতা রয়েছে। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এই কমলা লেবুতে রয়েছে। গর্ভবতী মহিলা এবং বিশেষ করে যাদের হার্টবার্ণের সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে অধিক পরিমাণে কমলা খাওয়া হতে পারে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। কমলালেবু হচ্ছে ভিটামিন সি এর অন্যতম উৎস, শুধু ভিটামিন সি নয় সাথে রয়েছে ভিটামিন এ ম্যাগনেসিয়াম পটাশিয়াম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ আরো বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন।
ভূমিকা:
কোন ধরনের ফলে খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়, অনেকে মনে করে কমলা খেলে ঠান্ডা লাগে, বিষয়টা আসলে মোটেও তাই নয়। আবার কিছু মানুষ মনে করে যে কমলা খেলে গ্যাস্ট্রিক এসিডিটি বেড়ে যাই। এসিডিটি বাড়তে পারে যদি আপনি সঠিক সময়ে কমলা না খান। ডায়েট করার ক্ষেত্রে অনেকেই কমলা খেয়ে থাকেন। কিন্তু অতিরিক্ত কমলা খাওয়া আপনার জন্য বিপদজনক হতে পারে। তাহলে আসুন জেনে নেই কমলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা। সাথে কমলার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ।
কমলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা:
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কমলা খুবই কার্যকরী একটি ফল। প্রতিদিন কমলা খেলে ছোটখাটো অসুখ-বিসুখ সহ বড় ধরনের রোগ ও না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কমলাতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি থাকে যা প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এ কারণে নিয়মিত কমলা খেলে বিভিন্ন রকম রোগ ব্যাধি ও সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কমলা খাওয়া খুবই ভালো। কারণ ইনফেকশন এবং কেটে যাওয়া এই সমস্ত এক্সিডেন্ট দ্বারা শরীরের কোন অংশে যে ঘা তৈরি হয়, কমলা খেলে ভিটামিন সি এর কারণে সে ঘা এবং ইনফেকশন দ্রুত কমে যায়।
চোখের জন্য় কমলা : চোখের সমস্য়া বর্তমান সময়ে অনেক বাচ্চা সহ সব মানুষেরই হয়ে থাকে,আর এই সমস্য়া কমাতে হলে প্রতিদিন অন্তত একটা করে কমলা খাওয়ার অভ্য়াস করুন। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য় করে কমলা কারন এই ফলে আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিনস।
মস্তিস্ক সুস্থ রাখতে : কমলা শুধু শরিরই ভালো রাখে তা নয়, কমলা বাচ্চাদের মস্তিস্কের বিকাশের জন্য়ও খুবই গুরুত্বপূর্ন। যে কোন বয়সের মানুষ ব্রেইন ভালো রাখতে কমলা খেতে পারেন।
জটিল অসুখ থেকে নিরাপদে রাখে কমলা : ক্য়ান্সারের মতো জটিল অসুখ থেকে নিরাপদ রাখে কমলা। তবে অবশ্য়ই দৈনিক একটা করে কমলা খেতে হবে,তাহলে এই ভয়ংকর অসুখ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।কারন কমলাতে আছে প্রচুর পরিমানে লিমোনয়েড, বিটা ক্য়ারোটিন ফ্ল্য়াভনয়েড যা ফুসফুস, মুখ, স্তন এবং ত্বকের ক্য়ান্সার প্রতিরোধে সাহায্য় করে।
ওজন কমাতে কমলা খান : কমলাই যেহেতু প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে, সেহেতু আমাদের শরিরের ভিটমিন সি এর ঘাটতি পুরনে কমলা যথেষ্ট। তাছাড়া ডায়েটারি ফাইবার, ক্য়ালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্য়াগনেসিয়াম এবং ফ্ল্য়াভোনয়েড আছে যা শরিরের বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য় করে। তাই যারা ওজন কমাতে চান তারা চাইলে প্রতিদিন একটা করে কমলা খেতে পারেন।
ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণে কমলা: দেখা যায় অনেক সময় মানুষের শরীরে ভিটামিন সি এর ঘাটতি। এই ঘাটতি দূর হতে পারে প্রতিদিন কমলা খাওয়ার মাধ্যমে। কমলা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, এই কমলালেবু প্রায় 70 ভাগ ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করে। শুধু ভিটামিন সি নয় এতে আরো বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন রয়েছে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে।
যৌন শক্তি বৃদ্ধি করতে কমলা:
সহবাস করার পূর্বে একটি কমলা খেয়ে নিলে সহবাসের সময় হবে দীর্ঘ এবং ইনস্ট্যান্ট এনার্জি তৈরি করতে খুবই কার্যকরী কমলা।
হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে: প্রতিদিন কমলা খেলে যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের এই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। এবং উচ্চ রক্তচাপ ঝুঁকি কমায়।
পরিপাকে সাহায্য করে কমলা: একটি মিডিয়াম সাইজের কমলালেবুতে প্রায় 2.5 গ্রাম সমপরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার থাকে। যার ফলে আপনার পরিপাকতন্ত্র ভালো থাকে। এছাড়া কমলা খেলে শরীরে শর্করার পরিমাণও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, এবং কমলা খাওয়ার আরেকটি বিশেষ দিক হলো প্রতিদিন কমলা খেলে কম ক্ষুধা লাগে।
ত্বক ভালো রাখতে কমলা:
প্রতিদিন কমলা খেলে ত্বকের অনেক উপকার হয়, কেননা কমলাতে রয়েছে প্রচুর বেটা কেরোটিন। এটা এক ধরনের পিগমেন্ট যা ত্বকের স্বাভাবিক মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।
তক সুন্দর রাখতে : সুন্দর তাক আমরা সবাই চাই। ত্বক সুন্দর রাখতে কমলার ভূমিকা অপরিসীম। কারণ কমলাতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের স্বাভাবিক রং ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং লাবণ্য বৃদ্ধি করতে থাকে।
ব্রণের সমস্যা দূর করে কমলা : অনেক কিশোর কিশোরী অথবা যুবক-যুবতীদের গালে কপালে এছাড়া মুখমণ্ডলের বিভিন্ন অংশে ব্রণ দেখা যায়। যদি আপনার এই ব্রণের সমস্যা থাকে তাহলে প্রতিদিন একটা করে কমলা খেতে পারেন, কমলা খাওয়ার ফলে ব্রণের সমস্যা পুরোপুরি নির্মল হয়ে যাবে।
গর্ভবতী মায়ের জন্য কমলা: গর্ভবতী মহিলাদের জন্য প্রতিদিন কমলা খাওয়া খুবই ভালো, কারণ এতে রয়েছে ফোলেট নামক একটি উপাদান যা কোষ বিভাজনের সাহায্য করে। আর তাই গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কমলা খাওয়া খুবই উপকারী।
কৃমি দূর করতে কমলা:
প্রতিদিন কমলা খেলে শিশুসহ সকল মানুষের কৃমি হবার সম্ভাবনা থাকে না। এর কারণ হচ্ছে কমলা লেবু একটি কৃমিনাশক ফল। এ কারণে নিয়মিত কমলালেবু খান এবং কৃমির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুরক্ষিত থাকুন।
রুচি বৃদ্ধিতে কমলা লেবু: নিয়মিত কমলালেবু খেলে খাবারের প্রতি রুচি ফিরে আসে এবং আপনার যদি ক্ষুধা মন্দা কিংবা অরুচি হয়ে থাকে তাহলে তা পুরোপুরিভাবে দূরীভূত হয়ে যায়। যার কারণে কমলাকে রুচি ববর্ধক ঔষধ হিসেবেও ধরা যেতে পারে।
কমলা খাওয়ার অপকারিতা:
এতক্ষণ আমরা জানলাম
কমলা খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে, এবার জেনে নেওয়া যাক কমলা খাওয়ার অপকারিতা বা বেশি মাত্রায় কমলা খেলে কি কি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে চলুন তাহলে বিস্তারিত জেনে নেই।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা: যাদের গ্যাসের সমস্যা রয়েছে বা দীর্ঘদিন গ্যাসের সমস্যায় ভুগছেন, তারা কমলালেবু বেশি খেলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন। কারণ অতিরিক্ত কমলালেবু খেলে পেট ব্যথা সহ এসিডিটি অধিক মাত্রায় হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় বদহজম বুক এবং পেটে ব্যথা হতে পারে।
কমলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা-ডায়রিয়াজনিত সমস্যা: কোন সন্দেহ নেই যে, কমলা একটি পুষ্টিকর ফল। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে এটি যেন নির্দিষ্ট পরিমাণেই খাওয়া হয়। কারণ কেউ যদি প্রতিদিন চাঁদ থেকে পাঁচটা কমলা খেয়ে ফেলে, তাহলে পেটে বিভিন্ন রকম সমস্যা যেমন, পেটে খিচুনি, পেট ফুলে যাওয়া, বুকে ব্যথা হওয়া, অ্যাসিডিটি ডায়রিয়া সহ বিভিন্ন রকম পেটের সমস্যা হতে পারে।
কমলার উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ তো বেশি, তাই অতিরিক্ত কমলা খেলে ভিটামিন সি এর পরিমাণ শরীরে বেড়ে যেতে পারে যার ফলে, বুক জ্বালা, বমি বমি ভাব, ঘুম কম হওয়া, রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়া এবং হার্ট অ্যাটাক হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। তাই অতিরিক্ত কমলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, নির্দিষ্ট পরিমাণে কমলা খান সুস্থ সবল থাকুন। প্রতিদিন এক থেকে দুইটা কমলা খেতে পারেন।
কমলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা-বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কমলা: ছোট বাচ্চাদের বেশি পরিমাণে কমলা খাওয়ানো উচিত নয়। কারণ এটি বাচ্চার পেটে ব্যথা ও সিনকোপের মত সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে যা খুবই পীড়াদায়ক।কমলার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সব সময় বেশি। তবে অতিরিক্ত কমলা খাওয়া উচিত নয়, এবং অতিরিক্ত কমলা খাওয়ার ফলে কোন জটিল বা বড় ধরনের আশঙ্কা হবার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।
পরিশেষ:
উপরে কমলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। সব ধরনের খাবারের মতো কমলাও অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। কারণ কমলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, এবং অতিরিক্ত ভিটামিন সি শরীরে গ্যাস্ট্রিক সহ বিভিন্ন রকম পেটের বদহজম, অ্যাসিডিটি, বুক জ্বালাপোড়া, ইত্যাদি পীড়াদায়ক ব্যথা সৃষ্টি করে থাকে। তবে নিঃসন্দেহে কমলা একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url