*/

দাউদ হলে কি খাওয়া নিষেধ - পুরাতন দাদ এর ঘরোয়া চিকিৎসা

প্রিয় পাঠকবৃন্দ আসসালামু আলাইকুম। আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন। আমরা আজকেও বিগত দিনগুলোর মতো একটি জরুরি টপিক নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। দাদ বা দাউদ রোগটি আমাদের সকলের কাছেই পরিচিত। দাদ হচ্ছে এক ধরনের ছত্রাকজনিত (fungal) অস্বস্তিকর চর্মরোগ। এই রোগ থেকে কে না রেহায় পেতে চাই। তাই আপনাদের সুবিধার কথা ভেবে আজকে দাদ হলে কি খাওয়া নিষেধ ও পুরাতন দাদ এর ৫টি ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করব।দাউদ হলে কি খাওয়া নিষেধ - পুরাতন দাদ এর ঘরোয়া চিকিৎসা

আপনি যদি পুরাতন দাদ এর ৫টি ঘরোয়া চিকিৎসা এবং দাদ হলে কি খাওয়া নিষেধ এই বিষয়ে জেনে থাকেন, তাহলে সম্পূর্ণ পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। এছাড়াও এই পোস্টে আমরা দাদ রোগ কীভাবে ছড়ায়, শরীরের কোন কোন স্থানে দাদ রোগ হয়, দাদ হলে যা যা করবেন, যা যা করবেন না সেই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করছি, আপনাদের উপকারে আসবে।

 ফানজিডাল ক্রিম এর কাজ কি

ভূমিকা

পা থেকে মাথা পর্যন্ত শরীরের যেকোন স্থানে দাদ হতে পারে। এই রোগে আপনি যত দ্রুত চিকিৎসা নিতে পারবেন, তত তাড়াতাড়ি এই রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। এই অস্বস্তিকর ও বিরক্তিকর রোগ থেকে সকলেই রেহাই পেতে চাই। প্রিয় পাঠক, আপনি যদি দাদ রোগের লক্ষন, কেন হয় ও দাউদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে না থাকেন, তাহলে গুরুত্ব সহকারে পুরো পোস্টটি শুরু থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। 

    দাদ হলে কি খাওয়া নিষেধ

    দাদ বা দাউদ নামক এই রোগটি সত্যিই একটি অস্বস্তিকর একটি রোগ। এমনকি অনেক চিকিৎসা করার পরেও এই রোগ সম্পূর্ণরূপে দূর নাও হতে পারে। এর একটি অন্যতম কারন হচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তি দাদ থাকলে কখনও কখনও এমন খাবার খায় যা তাদের খাওয়া উচিত নয়।

    সেগুলো খাবার খেলে দাদ রগ থেকে মুক্তি পাওয়া অনেক জটিল হয়ে যায়। তাই দাদ বা দাউদ হলে কী খাবার খাওয়া যাবে না সেটি জেনে নেওয়া জরুরি। তাহলে আসুন, দাদ হলে যেসব খাবার খাওয়া যাবে না সেগুলো জেনে নিই।
    • গরুর মাংস
    • ইলিশ মাছ
    • শুটকি মাছ
    • চিংড়ি মাছ
    • কচু
    • বেগুন
    • ফুলকপি
    • ফাস্ট ফুড
    • ভাজাপোড়া খাবার
    • চিনিযুক্ত খাবার
    যারা দাদ থেকে চিকিৎসার পরেও এই রোগ থেকে রেহাই পাচ্ছে না তারা উপরে দেওয়া উল্লেখিত খাবার গুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আর দাদ সম্পূর্ণভাবে ভালো না হওয়া পর্যন্ত এই খাবারগুলো খাওয়া যাবে না। তাহলে ভালো চিকিৎসা নিলে আশা করছি অতি দ্রুত এই রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।

    দাউদ কিভাবে ভালো হয়

    দাউদ কিভাবে ভাল হয় তার কিছু পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করব। এখন অধিকাংশ মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই দাউদ রোগ। ওষুধ কিংবা মলম ব্যভার করেও অনেকের এখন দাউদ কমে না। তার জন্য ওষুধ বা মলব কিংবা শ্যাম্পু ব্যবহার করার পাশাপাশি আপনাকে ঘরোয়া কিছু টিপস অবল্মবন করতে হবে। 

    শরীরে দাউদ দেখা দিলে সাধারন যেগুলো সাবান রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করা যাবে না। তারপরে চিকিৎসকের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও নারকেলের তেল, হলুদ এবং গন্ধক ঘরোয়া ওষুধ তৈরি করলেও খুব তাড়াতাড়ি ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

    এই উপাদানগুলো যদি আপনি শরীরে ভালমত আক্রান্তস্থানগুলোতে লাগানো হয় তাহলে অনেক দ্রুত দাউদ সেরে যাবে। এছাড়াও আমাদের অবশ্যই ওষুধ, মলম ব্যবহার করার পাশাপাশি লোশন ও শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। তাহলেই দাউদ খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে বলে আশাবাদী। আশা করছি, যেভাবে দাউদ ভালো হয় তা জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, পুরাতন দাদ এর চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নেই।

    পুরাতন দাদ এর ঘরোয়া চিকিৎসা

    দাদ বা দাউদ রোগ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্রিম ও মেডিসিন রয়েছে। তারপরও আপনারা চাইলে এই রোগটি ঘরোয়া উপায়ে দূর করতে পারবেন। দাদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা করার অনেকগুলো উপায় আছে তবে আপনাকে অবশ্যই ঘরোয়া চিকিৎসার উপকরণ গুলো সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। দাউদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা নিম্নে আলোচনা করা হলো-

    নিমের পাতা: দাদের ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে নিমের পাতা অনেক কার্যকরী। এক্ষেত্রে নিমের কচি পাতা বেটে আক্রান্ত স্থানে লাগালে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

    তুলসী পাতা: তুলসী পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও আন্টিফাঙ্গাল উপাদান roye। যা আমাদের শরীরের দাউদ বা দাদের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও তুলসী পাতা আমাদের শরীরে চুলকানি ও র‌্যাশ দূর করে। তাই দাউদের সমস্যায় তুলসী পাতার ভূমিকা অপরিসীম।


    নারকেল তেল: এছাড়াও নারকেলের তেলের মধ্যে য়াছে মাইক্রোবিয়াল (Microbial) এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল (Antifungal) নামক বিশেষ উপাদান যা দাদ রোগের সংক্রমণ রোধ করতে সহায়তা করে থাকে। এর ব্যবহারে প্রথমে আপনাকে একটি পাত্রে নারকেলের তেল সামান্য গরম করে নিতে হবে। তারপর এই গরম তেল আক্রান্ত জায়গায় লাগিয়ে দিতে হবে তাহলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

    রসুন: রসুনের মধ্যে অ্যাজুইনা নামক এক ধরনের প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে যেটি ছত্রাকজনিত রোগ দাদ কমাতে সাহায্য করে। এটি ব্যবহার করার করতে এক থেকে দুই কোয়া রসুন ভালোমতো থেতলে নিতে হবে।

    তারপরে তার সাথে ৩ থেকে ৪ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ও ৩ থেকে ৪ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে আক্রান্ত জায়গায় প্রতিদিন লাগাতে হবে। এভাবে থতলানো রসুন লাগানোর পর কয়েক ঘন্টা রেখে দিতে হবে। তারপরে আক্রান্ত স্থানটি গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। আশা করছি, বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।

    দাদ রোগে যা যা করবেন

    আমরা এবার জেনে নিব যে দাউদ রোগে যা যা করবেন। দাউদ রোগ হলে বেশ কিছু সতর্কতা জারি রাখতে হবে। নাহলে যারা এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের জন্য অন্য কারো এই রোগের সংক্রমণ ছড়াতে পারে। আবার যার এই রোগ হয়েছে সেই যদি সচেতন না থাকে, তাহলে তার শরীরে এ রোগ ভালো না হয়ে বরং জটিলতা বাড়তেই থাকবে।
    • প্রথমত আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বক সবসময় শুকনো ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আক্রান্ত ত্বক সংস্পর্শে আসলে সাথে সাথে হাত ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করুন বা হ্যন্ডওয়াশ দিয়ে ধুলে বেশি ভালো।
    • আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতিদিন ব্যবহারের কাপড় (যেমন: তোয়ালে বা গামছা ও বিছানার চাদর এবং পড়নের কাপড়) নিয়মিত ফুটন্ত পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
    • এই রোগের লক্ষণ দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করুন।

    দাদ রোগে যা যা করবেন না

    উপরে দাদ রোগে যা যা করবেন সেগুলো আলোচনা করেছি। আশা করছি, আপনারা জেনে নিয়েছেন। আবার আসুন, দাদ রোগে যা যা করবেন না সেগুলো সংক্ষেপে জেনে নেই।
    • দাদ রোগে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির ব্যবহারকৃত জিনিসপত্র (যেমন: গামছা বা তোয়ালে, চিরুনি ও বিছানার চাদর)  এসব জিনিস অন্যরা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
    • রোগিরা আক্রান্ত স্থানের ত্বক স্পর্শ করা অথবা বার বার চুলকানো যাবে না। তা নাহলে দাদ বা দাউদ শরীরের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারন এই রোগ সংক্রমণ হওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে যায়।
    • এমনকি বার বার চুলকানোর কারণে ত্বকে ভিন্ন আরেকটি জীবাণু আক্রমণ করে ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে, যা দাদের চিকিৎসাকে আরও বেশি জটিল হয়ে যাবে। তাই আক্রান্ত স্থান যতই চুলকাতে মন চাক না কেন বার বার চুলকানো থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।

      যেসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে যাওয়া জরুরি

      দাদ বা দাউদ রোগে যেসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াটা জরুরি আসুন এবার আমরা সেই বিষয়ে জেনে নিব। 
      • যদি কোনো কেমোথেরাপি কিংবা স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ ব্যবহার ও ডায়াবেটিস ইত্যাদি ব্যবহার করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
      • বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আক্রান্ত স্থানে অ্যান্টিফাঙ্গাল (Anti-Fungal) ঔষধ ব্যবহারের পরেও এই রোগের কোন উন্নতি না হলে।
      • মাথায় ত্বকে দাদ দেখা দিলে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ১ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত মুখে খাওয়ার ঔষধ এবং শ্যাম্পু ব্যবহার পরেও যদি কোন উন্নতি না হয়ে আরও বেশি জটিলতা সৃষ্টি হয় তাহলে পুনরায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

      দাদ সারাতে স্টেরয়েড মলম বা ক্রিম ব্যবহার করা যাবে?

      দাদ বা দাউদ সারাতে স্টেরয়েড মলম বা ক্রিম ব্যবহার করা যাবে কিনা এর সঠিক তথ্যটি হয়তো অনেকেই জানেন না। আসুন, আমরা সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিই।

      দাদ বা দাউদ রোগে ফুশকুড়ি দেখা দিলে আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা স্টেরয়েড জাতীয় মলম বা ক্রিম ব্যবহার করে থাকি। এটা একেবারেই উচিত না। কারণ, এসব মেডিসিন চুলকানি ও ত্বকের লালচে ভাবগুলো কমাতে সহায়তা করলেও, দাদ সৃষ্টিকারী জীবাণুর হাত থেকে পুরোপুরি রক্ষা করতে পারে না।

      যার ফলে, এসব ক্রিম ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও দুর্বল করে ফেলে। এজন্য দাদ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমনকি ইনফেকশন ত্বকের অনেক গভীরে প্রবেশ করে নানান জটিলতা সৃষ্টি করার সম্ভাবনা থেকে যায়।


      এছাড়াও কোনো কোনো সময়ে স্টেরয়েড জাতীয় মলম বা ক্রিম দাদের ধরনও পরিবর্তন করে দেয়। যার ফলে একজন চিকিৎসকের জন্য সঠিকভাবে দাদ নির্ণয় করা কঠিন হয়ে যায়। তাই দাদের চিকিৎসায় ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে এই ধরনের ক্রিম ব্যবহার না করাই উত্তম। আশা করছি, বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।

      লেখকের শেষ মন্তব্যঃ দাদ হলে কি খাওয়া নিষেধ

      আশা করছি, আপনারা এতক্ষণে দাদ হলে কি খাওয়া নিষেধ ও পুরাতন দাদ এর ৫টি ঘরোয়া চিকিৎসা  সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। আশা করি, আপনারা উল্লেখিত বিষয়গুলো বিস্তারিত জেনে উপকৃত হয়েছেন। আপনি যদি কোন অংশ বুঝতে না পারেন, তাহলে এই পোষ্টের কমেন্ট সেকশনে জানিয়ে দিবেন। তাহলে, আমরা আপনাকে সেই অংশটুকু বুঝিয়ে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

      দাদ রোগ সম্পর্কিত আমাদের পোষ্টটি আপনার যদি পছন্দ হয়ে থাকলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। এতে অন্যরাও এই বিষয়গুলো জানতে পারবেন।  এ ধরণের নিত্যনতুন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ।

      এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

      পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
      এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
      মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

      অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

      comment url