হঠাৎ হাই প্রেসার হলে করণীয়
হঠাৎ হাই প্রেসার হলে করণীয়, এবং দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায়, আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা তো কেমন আছেন সবাই আশা করি সবাই ভাল আছেন এবং সুস্থ আছেন। হঠাৎ হাই প্রেসার হলে করণীয় কি এবং দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় নিয়ে থাকছে আজকের সম্পন্ন প্রতিবেদন। আশা করছি শেষ পর্যন্ত থাকবেন আপনি যদি একজন হাই প্রেসার রোগী হয়ে থাকেন তবে জানতে চান যে হঠাৎ হাই প্রেসার হলে করণীয় কি তাহলে আজকে এই পোস্টটি আপনার জন্য অনেক কাজে আসবে।
হঠাৎ হাই প্রেসার হলে করণীয়
উচ্চ রক্তচাপ প্রায়ই একটি স্থায়ী রোগ হিসেবে বিবেচিত। এর জন্য চিকিৎসা ও প্রতিরোধ দুটোই জরুরী। তা না হলে বিভিন্ন জটিলতা, এমনকি মৃত্যুরও ঝুঁকি থাকে। তাহলে প্রিয় পাঠক বৃন্দ হঠাৎ হাই প্রেসার হলে করণীয় কি জেনে নেওয়া যাক। হঠাৎ হাই প্রেসার হলে করণীয় কি এটা জানার আগে আমাদের জানতে হবে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন কি?
আরো পড়ুন : ডায়বেটিস রোগির খাবার তালিকা
হঠাৎ হাই প্রেসার হলে করণীয় অথবা দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় এ বিষয়ে জানার পূর্বে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন এ জিনিসটা কি আমাদের ভালোভাবে জানা প্রয়োজন তবেই সঠিক চিকিৎসা করা অথবা ঘরে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব একজন ভাই প্রেশার রোগীকে।
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন
স্বাভাবিক রক্তচাপ হলো সেই বল, যার সাহায্যে রক্ত শরীরের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছায়। রক্তচাপের কোন একক নির্দিষ্ট মাত্রা নেই। বিভিন্ন বয়সের সঙ্গে সঙ্গে একেক জন মানুষের শরীরে রক্তচাপের মাত্রা ভিন্ন এবং একই মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে স্বাভাবিক এই রক্তচাপক বিভিন্ন রকম হতে পারে।
উত্তেজনা দুশ্চিন্তা অধিক পরিশ্রম ও ব্যায়ামের ফলে রক্তচাপ বাড়তে পারে। ঘুমের সময় এবং বিশ্রাম নিলে রক্তচাপ কমে যায়, রক্তচাপের এই পরিবর্তন স্বাভাবিক নিয়মের মধ্যেই পড়ে। অধিকাংশ সময় রক্তচাপের মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রার ভেতরে থাকে। সাধারণত বয়স যত কম, রক্তচাপ তত কম হয়।
যদি কারো রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি হয় এবং অধিকাংশ সময় এমনকি বিশ্রামকালীন ও বেশি থাকে, তবে ধরে নিতে হবে তিনি উচ্চ রক্তচাপের রোগী। এবং দেরি না করে অবশ্যই একজন ভালো ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তার চিকিৎসা করতে হবে।
এখন প্রশ্ন হল হঠাৎ হাই প্রেসার হলে করণীয় কি বা দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় কি? আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক :
- প্রথমে খেয়াল রাখবেন আপনি উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ খেয়েছেন কিনা, যদি না খেয়ে থাকেন সাথে সাথে খেয়ে নিন।
- নিরিবিলি এবং শান্ত পরিবেশে বিশ্রাম নিতে হবে।
- মাথা নিচু না করে টুলের মতো উঁচু স্থান অথবা টুলে বসে পানি দিতে হবে।
- এবং সর্বোপরি দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
- দৈনিক চেষ্টা করবেন কমপক্ষে সাত ঘণ্টা ঘুমানোর।
- দৈনিক স্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন।
- পাকা তেতুল খাওয়াতে পারেন এতে কিছুটা হলেও আরাম হয়।
উচ্চ রক্তচাপ একটি জটিল ব্যাধি
উচ্চ রক্তচাপ ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপের কোন প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যায় না। নিরবে উচ্চ রক্তচাপ শরীরের বিভিন্ন অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এজন্যই উচ্চ রক্তচাপ কেউ নীরব ঘাতক বলা যেতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত এবং চিকিৎসা বিহীন উচ্চ রক্তচাপ থেকে মারাত্মক শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুন : কমলা খাওয়ার গোপন সাতটি উপকারিতা
আর তাই উচ্চ রক্তচাপকে কখনোই হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয়। অনেকে এরকম রয়েছেন যারা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেতে চান না। এমনকি কখনোই করা উচিত নয় কারণ অধিকাংশ মানুষ উচ্চ রক্তচাপের কারণে স্ট্রোক কারণে মারা যায়।
হঠাৎ হাই প্রেসার হলে করণীয় কি
হঠাৎ ব্লাড প্রেসার বৃদ্ধি পেলে কিছু লক্ষণ দেখা দেয় যেমন, চোখে ঝাপসা দেখা, বমি বমি ভাব, কথা ভুলে যাওয়া, ঝিমিয়ে পড়া কথা আটকে যাওয়া মাথাব্যথা সহ আরো বেশ কিছু পেটে খিচুনি দেওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যদি এরকম লক্ষণ কোন রোগীর মধ্যে দেখতে পান, তবে সেক্ষেত্রে বসে না থেকে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।
অনেক সময় হাই প্রেসার হলে আমরা দ্রুত ওষুধ খাওয়ার চেষ্টা করি যেটা মোটেও ঠিক নয়। ঔষধ খাওয়ারও কিন্তু একটা সময় থাকে এখন হঠাৎ করে হাই প্রেসার হলেও সাথে সাথে ঔষধ খেয়ে নিলে হেতে বিপরীত ধরতে পারে। এ কারণে যদি হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে তবে সে ক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়া উচিত।
এখন হঠাৎ হাই প্রেসার হলে করণীয় কিছু কাজের মধ্যে প্রথম কাজ হল রোগীকে বেশি করে টক জাতীয় খাবার খাওয়ান। বিশেষ করে পাকা তেতুলের টক অথবা কড়া টক আচার খাওয়াতে পারেন। আপনার হাতে যদি টক জাতীয় কিছু না থাকে তাহলে, শস্য দানা বা শাকসবজি জাতীয় কিছু খাওয়াতে পারেন।
যেমন বিভিন্ন ধরনের বিচি জাতীয় খাবার, যেমন ছোলা, লাল চালের ভাত, সবুজ শাকসবজি, বাদাম, সিনের বিচি বিভিন্ন শস্য দানা, পাকা টমেটো, ইত্যাদি জাতীয় খাবার হাই প্রেসার এর রোগীকে দ্রুত হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আপনারা খাওয়াতে পারেন। তবে সবথেকে ভালো হয় আপনার হাতে যদি টক জাতীয় খাবার থাকে সেটা দ্রুত খাইয়ে দিন প্রেসার নিচে নেমে যাবে ইনশাআল্লাহ।
জেনে নিন উচ্চ রক্তচাপ হলে শরীরে কি কি জটিলতা দেখা দিতে পারে
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত না থাকলে, শরীরের গুরুত্বপূর্ণ চারটি অঙ্গে মারাত্মক ধরনের জটিলতা হতে পারে বা দেখা দিতে পারে। যেমন হৃৎপিণ্ড, কিডনি, মস্তিষ্ক এবং চোখ এই চারটি অঙ্গে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থেকে যন্ত্রের মাংস বেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। দুর্বল হৃদযন্ত্র রক্ত পাম্প করতে পারেনা এবং এ অবস্থায় বলা হয় হার্ট ফেইলিওর।
আরো পড়ুন : টাইমেক্স ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
রক্তনালীর গাত্র সংকুচিত হয়ে যেতে পারে হার্ট অ্যাটাক বা ইনফার্কশন হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে, মস্তিষ্কে স্ট্রোক হতে পারে, যা থেকে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া চোখের রেটিনাতে রক্তক্ষরণ হয়ে রোগী অন্ধত্ব বরণ ও করতে পারে। আর এ কারণে আমাদের জানা জরুরি হঠাৎ হাই প্রেসার হলে করণীয় এবং দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায়।
হঠাৎ করে প্রেসার বেড়ে গেলে কিছু খাবার নিয়ম মেনে খাওয়া উচিত বা প্রতিদিন আপনার খাবার রুটিনে এই খাবারগুলো অবশ্যই রাখার চেষ্টা করুন তাহলে প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকবে নিচে আমি সেগুলা উল্লেখ করে দিলাম।
চর্বি ছাড়া খাবার
হঠাৎ হাই প্রেসার হলে করণীয় কাজের মধ্যে সবথেকে জরুরি যে কাজটা সেটা হল কম চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা। কম চর্বিযুক্ত খাবার হলেও দৈনিক অল্প করে খেতে হবে দৈনিক দুধ খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এছাড়াও দুগ্ধজাত খাবার দই প্রতিদিন এক গ্লাস করে খেতে পারেন। হঠাৎ হাই প্রেসার হলে এসব খাবার অনেক বেশি কাজে লাগে।
ফলমূল খাওয়া
যে সমস্ত মানুষের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, বা যারা চাচ্ছেন দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় জানতে, তারা প্রতিদিন একটা ফলের এক টুকরো খেতে পারেন। যেমন অনেকে রয়েছেন ফলের রস খান এর থেকে ভালো হয় একটা ফলকে তিন ফলা করে এক ফালি খেয়ে ফেলা।
বিচি জাতীয় খাবার খাওয়া
বিচি জাতীয় খাবার প্রতি সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন খাওয়ার চেষ্টা করবেন একজন হাই প্রেসারের রোগী। কারণ বিচি জাতীয় খাবার খেলে দ্রুত হাই প্রেসার কমানো সম্ভব হয়ে থাকে। বিচি জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে বাদাম, শিম এর বিচি, মটরশুঁটি বিভিন্ন ধরনের শস্য দানা ইত্যাদি।
দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায়
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় উচ্চ রক্তচাপের তেমন কোন পূর্ব লক্ষণ থাকে না। তবে উচ্চ রক্তচাপের কারণে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগের সৃষ্টি হতে পারে বা হয় সেগুলো হল হৃদরোগ, স্ট্রোক ঝুঁকি, কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া অথবা কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, রোগীর বুক ধরফর করা, বমি বমি ভাব সহ মাথা ব্যথা হতে পারে। তাই দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে শতকরা ৯৪% রোগের ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের নির্দিষ্ট কোন কারণই নেই। বাকি যেই 6 শতাংশ রয়েছে এদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে উচ্চ রক্তচাপ ঘটে থাকে। তবে এখানে ঝুঁকিতে থাকা রোগীরা হলো ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তি, এবং যারা ধূমপান করে অতিরিক্ত আকারে ধূমপান করে, তারপরে পরিশ্রমই করেন না এ ধরনের মানুষ।
এই ধরনের মানুষগুলোর উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি। আর তাই আপনার যদি কাজ নাও থাকে সেক্ষেত্রে দৈনিক অন্তত 20 মিনিট হাটাহাটি করার চেষ্টা করবেন।
লেখকের মন্তব্য
হঠাৎ হাই প্রেসার হলে করণীয় এবং দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় আশা করছি পাঠকবৃন্দ আপনারা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ বুঝতে পেরেছেন। হাই প্রেশার একটি মারাত্মক ব্যাধি, এর থেকে চির মুক্তির কোন উপায় নেই তবে নিয়মিত ঔষধ সেবন করে এবং নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে সুস্থ থাকা যায়। উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই ধূমপান, মধ্যপান, বিড়ি সিগারেট ইত্যাদি বদ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url