*/

কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা বিস্তারিত জানুন

প্রিয় পাঠকবৃন্দ আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। কেশর আলুর নাম আমরা সকলেই শুনেছি। আবার অনেকের কাছে এই নামটি নতুনও হতে পারে। কেশর আলু খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক গুনে বেশি। তো আপনি কি কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের এই পোষ্টটি আপনার জন্য অনেক উপকার হতে চলেছে। কেননা, এই পোষ্টে কেশর আলু্র উপকারিতা ও অপকারিতা সহ আরও জরুরি তথ্যাদি তুলে ধরব।
কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা

মূলত আপনাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে কেশর আলু সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় যাবতীয় তথ্য আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এই সম্পর্কে আপনাকে সঠিক ধারনা পেতে হলে আমাদের সাথে শেষ অবদি থাকতে হবে। তাই অবহেলা না করে এই পুরো পোষ্টটি মনযোগ সহকাড়ে শুরু থেকে শেষ অবদি পড়ার অনুরোধ রইলো। আশা করি, এই কেশর আলু সম্পর্কে আমরা আপনাকে এমন কিছু তথ্য প্রদান করব যেগুলো জানতে পেরে আপনাদের উপকারে আসবে।

ভূমিকা - কেশর আলু

কেশর আলু বিভিন্ন স্বাস্থ্য গুণে ভরপুর। কেশর আলুতে প্রচূর পরিমানে উপকারিতা রয়েছে। এই আলু নিয়মিত খাওয়ার ফলে আমাদের দেহের বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের কাজে আসে। আবার এই কেশর আলু নিয়মিত খেতে পারলে আমাদের দেহের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা এবং চোখের সমস্যাগুলো দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এমন আরও বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত তুলে ধরবো। তবে তার আগে আমরা নিচের অংশে কেশর আলু এবং এর পুষ্টিগুন সম্পর্কে জেনে নিব।

কেশর আলু কি

কেশর আলু আলুর একটি প্রকারভেদ। কেশর আলু মূলত শীতকালীন সবজি। কেশর আলু, শাক আলু, কেশুর আলু নামেও পরিচিত। কেশর আলুর ইংরেজি নাম হল - Yambean , Jicama, goitenyo । কেশর আলুর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Pachyrhizus Tuberosus। কেশর আলুর প্রথম জন্ম মেক্সিকোতে হয়। 

তবে সুমিষ্ট মূল বিশিষ্ট এই আলুর জনপ্রিয়তা এখন দক্ষিণ এশিয়াতে বেশি। কেশর আলুর উপকারিতা কেশর আলুর পুষ্টিগুণাগুন অনেক বেশি। আশা করছি আপনারা কেশর আলু সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা পেয়েছেন। এবার চলুন কেশর আলুর পুষ্টিগুণাগুন নিচের অংশ থেকে জেনে নেওয়া যাক।

কেশর আলুর পুষ্টিগুণ

কেশর আলুর পুষ্টিগুণ অনেক। আমরা অনেকেই কেশর আলুর পুষ্টিগণ সম্পর্কে জানিনা। কেশর আলুতে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে। কিশর আলুতে রয়েছে শর্করা, ফাইবার, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, প্রোটিন, চর্বি, পানি ইত্যাদি।


কেশর আলুর পুষ্টিগুণ সমূহ নির্দিষ্ট অনুপাতে কেশর আলুতে থাকে। আমাদের দেহের শর্করার চাহিদা পূরণে কেশর আলু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেশর আলুতে প্রচুর স্টার্চ ও আমিষ থাকে। নিচে কেশর আলু পুষ্টিগুণ তুলে ধরা হলো।

প্রতি ২০০ গ্রাম কেশর আলুর পুষ্টি গুণাগুণ নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
  • ক্যালোরি থাকে - ৩১৮ কে জু
  • শর্করা থাকে - ১৭.৬ গ্রাম
  • আয়রন থাকে - ১.২ মিগ্রা
  • চিনি থাকে - ৩.৬ গ্রাম
  • খাদ্য আঁশ থাকে - ৯.৮ গ্রাম
  • চর্বি থাকে - ০.২ গ্রাম
  • প্রোটিন থাকে - ১.৪ গ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম থাকে - ২৪ মিগ্রা
  • সোডিয়াম থাকে - ৮ মিগ্রা
  • পটাশিয়াম থাকে - ৩০০ মিগ্রা
  • জিংক থাকে - ০.৪ মিগ্রা
  • পানি থাকে - ৯০ ভাগ
  • ভিটামিন সি থাকে - ৪০.৪ মিগ্রা
  • ভিটামিন ই থাকে - ১ মিগ্রা
  • ভিটামিন কে থাকে - ০.৬ মিগ্রা
  • ক্যালসিয়াম থাকে - ২৪ মিগ্রা
আশা করছি আপনারা প্রতি ২০০ গ্রাম কাচা থাকাকালীণ কেশর আলু্র পুষ্টি গুণাগুণ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা পেয়েছেন। এবার চলুন কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা নিচের অংশ থেকে জেনে নেওয়া যাক।

কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা

কেশর আলুতে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে। তাই কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা। কেশর আলুতে রয়েছে শর্করা, ফাইবার, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, প্রোটিন, চর্বি, পানি ইত্যাদি। আমরা অনেকেই কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা জানি না বিধায় কেশর আলু খেতে চাই না।

কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা একবার জানতে পারলে, কেশর আলু খেতে আপনি বাধ্য হবেন। কেশর আলু মিষ্টি, নরম স্বাদের আলু। ছোটো থেকে বড়ো সকলেই কেশর আলু খেতে পারবেন। কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা জানলে বাচ্চাদের নির্দ্ধিধায় কেশর আলু খাওয়ানো যাবে। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে আমরা কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই।

কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতাগুলো নিম্নে বিস্তারিত তুলে ধরা হলোঃ
  • কেশর আলু ত্বকের জন্য উপকারী কারণ কেশর আলুতে রয়েছে ভিটামিন সি। আর আমরা সকলেই জানি ভিটামিন সি ত্বকের জন্য খুব উপকারী।
  • কেশর আলুতে অনেক ফাইবার রয়েছে, যা আমাদের হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে। তাই কেশর আলু কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।
  • কেশর আলুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ রয়েছে। ভিটামিন এ আমাদের চোখের জন্য খুব উপকারী। তাই যাদের চোখের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা অনেক।
  • হার্টের সুস্থতার জন্য আমরা অনেক কিছু করি। কাঁচা কেশর আলু খাওয়া হার্ট এর এজন্য অনেক উপকারী। কারণ কাঁচা কেশর আলুতে হার্টের জন্য উপকারী বিভিন্ন উপাদান থাকে।
  • কিশোর আলো রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। তাই যাদের রক্তশূন্যতা রয়েছে তাদের কেশর আলু খাওয়া উচিত।
  • কেশর আলু সাধারণত ঠান্ডা হয় এবং এতে প্রায় ৯০ভাগ পানি রয়েছে। তাই দেহের পানি শূন্যতায় কেশর আলু খাওয়া যেতে পারে।
  • কেশর আলুতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি রয়েছে। তাই দেহে শক্তির জোগাতে কেশর আলুর জুড়ি মেলা ভার।
  • কেশর আলুতে অনেক ভিটামিন রয়েছে। তাই কেশর আলু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • কেশর আলু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে কারণ কেশর আলুতে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।
  • কেশর আলুতে রয়েছে ভিটামিন বি৬। যেটা মস্তিষ্কের নার্ভ সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
  • কেশর আলু তে শর্করা রয়েছে এবং এটি কম মিষ্টি। তাই কেশর আলু খেলে সমস্যা হয় না আবার পেট ভরা থাকে। তাই কেশর আলু খেলে ওজন কমে।

আপনি হয়তো এতক্ষণে এই অংশ থেকে নিশ্চয়ই কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা জেনে গেছেন। এর উপকারিতাগুলো জানার পরে চেষ্টা করবেন প্রতিদিনের খাবারে কেশর আলু রাখার। এবার কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা জেনে নেওয়ার পাশাপাশি কেশর আলু খাওয়ার অপকারিতা জেনে নেওয়া যাক।

কেশর আলু খাওয়ার অপকারিতা

কেশর আলু শীতকালীন সবজি। কেশর আলু অনেক উপকারী সবজি। তবে উপকারী বলেই যে, কেশর আলু বেশি পরিমাণ খাবেন সেটা ঠিক নয়। কিছু কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনি কেশর আলু খাওয়ার অপকারিতা রয়েছে।

কেশর আলু অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি সবজি। আমাদের শরীরের অনেক পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ করতে এই কেশর আলু সক্ষম। তাই কেশর আলু অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত কেশর আলু খাওয়ার অপকারিতা রয়েছে।


কেশর আলু খাওয়ার অপকারিতাগুলো নিম্নে বিস্তারিত তুলে ধরা হলোঃ
  • কেশর আলুতে আমাদের শরীর জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি ও প্রোটিন আছে। তাই বেশি কেশর আলু খেলে আমাদের শরীরে ভিটামিন সি পরিমাণ বেড়ে যায়। যার ফলে শরীরের ক্ষতি হয়।
  • কেশর আলুতে প্রচুর পরিমাণ পানি রয়েছে। তাই অনেকে পানি শূন্যতা দূর করতে কেশর আলু খান। কিন্তু বেশি বেশি কেশর আলু খেলে আমাদের শরীরে পানি বেড়ে যাবে এবং কিডনির সমস্যা হবে।
  • কেশর আলু ঠান্ডা জাতীয় সবজি। তাই বেশি বেশি কিশোর আলু খেলে মুখে ঠান্ডা জমে ঠান্ডা জাতীয় বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
  • কেশর আলু ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে। কারণ কেশর আলুর চামড়ায় রেটনন নামক একটি পদার্থ থাকে। যা আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর।
  • কেশর আলুতে বিভিন্ন জনের এলার্জি থাকতে পারে। যাদের কেশর আলুতে এলার্জি দেখা দিবে তাদের কেশর আলু হতে বিরত থাকা উচিত।

কেশর আলু কোথায় পাওয়া যায়

কেশর আলু কোথায় পাওয়া যায়? আমরা অনেকেই জানি না। কেশর আলু সাধারণত চরাঞ্চলে পাওয়া যায়। আবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে, ঝাড়খন্ডে, বিহারে প্রচুর কেশর আলু চাষ হয়। বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশের ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় কেশর আলু চাষ হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারগুলোতে শীতের সময় কেশর আলু ভালো পরিমাণ পাওয়া যায়। এছাড়াও বছরের অন্যান্য সময়ে বাংলাদেশের বাজারে কেশর আলু মজুদ থাকে। বর্তমানে দেশের গাবসারা উপজেলায় ও অর্জুনা ইউনিয়নে অনেক কেশর আলু চাষ হচ্ছে। গাবসারার রাইবাশালিয়া নামক একটি এলাকা রয়েছে যেখানে প্রচূর পরিমাণে কেশর আলু পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের বড় বড় বাজার গুলোতে এখন কেশর আলু পাওয়া যায়। এছাড়াও বর্তমানে অনলাইনের যুগে অনেক বিক্রেতা অনলাইনেও কেশর আলু বিক্রি করেন। আপনি বিভিন্ন ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনলাইনে কেশর আলু অর্ডার করতে পারবেন।

কেশর আলুর দাম কত

আপনি কি কেশর আলুর দাম কত জানতে চান? কেশর আলু কিনার আগে কেশর আলুর দাম কত জানা উচিত। কেশর আলু বর্তমানে প্রায় সব বাজারেই পাওয়া যায়। তাই পূর্বের তুলনায় কেশর আলুর দাম বর্তমানে কমেছে।

কেশর আলুর দাম বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন রকম হতে পারে। কারণ সব এলাকায় ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম এক নয়। আবার কিছু কিছু জায়গায় অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে কেশর আলুর দাম বেশি হয়। ২০২৪ সালে এসে সকল দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সাথে কেশর আলু দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।

কেশর আলু অনেক উপকারী সবজি এবং একই সাথে সুস্বাদু। তাই কেশর আলু খাওয়ার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেশর আলুর বর্তমান বাজার মূল্য প্রতি কেজিতে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। জায়গা বিশেষে এ দাম কম বেশি হতে পারে।

লেখকের শেষ মন্তব্যঃ কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা

সম্মানির পাঠক, আপনি যদি কেশর আলু নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে অবশ্যই ভালো ফলাফল পাবেন। আর যদি আপনি বেশি পরিমাণে এগুলো খেয়ে থাকেন, তাহলে উপরে উল্লিখিত ক্ষতিকর প্রভাব বা অপকারিতাগুলো দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে কেশর আলু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সহ কেশর আলুর বিভিন্ন দিক দিক তুলে ধরেছি আশা করি আপনারা উক্ত বিষয় সম্পর্কে জেনে উপকৃত হতে পেরেছেন।


আমাদের আজকের কেশর আলু সম্পর্কিত পোষ্টটি আপনাদের ভালো লাগলে অবশ্যই প্রিয়জনদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন যাতে তারাও এই বিষয়ে জেনে উপকৃত হতে পারে। বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কিত অন্যান্য জরুরী আপডেট তথ্যসমূহ জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url