*/

শর্করার প্রধান কাজ কি

শর্করার প্রধান কাজ কি, প্রিয় পাঠক বৃন্দ শর্করার প্রধান কাজ কি তা নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন। শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এর কাজ কি তা নিয়ে আজকের এই সম্পূর্ণ প্রতিবেদন থাকছে পুরো পোস্ট জুড়ে। আশা করছি আজকের এই পোস্টটি আপনার ব্যক্তিগত জীবনে অনেক কাজে আসবে। এবং শর্করার প্রধান কাজ কি এ বিষয়ে খুব ভালোভাবে জানতে পারবেন।
শর্করার প্রধান কাজ কি

শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এর কাজ কি

শর্করাকে স্বাদের ভিত্তিতে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন এই তিনটি উপাদান নিয়ে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট গঠিত। শর্করায় হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন দুই অনুপাত 1 এ থাকে। শর্করার আণবিক সংকেত,Cn(H20)n ; যেমন গ্লুকোজ সুক্রোজ ইত্যাদি।


সুগার : সুগার জাতীয় শর্করা হলো মিষ্টি জাতীয় সকল ধরনের খাবার।

নন সুগার : পলিস্যাকারাইড জাতীয় সকল ধরনের উপাদান যা মিষ্টি নয় এগুলোই নন সুগার শর্করা।

শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এর কাজ কি এবং এর উৎস

ধান বা চাল,গম ভুট্টা, বাজরা আলু কচু গাজর ইত্যাদি। শ্বেতসার বাস স্টার্চ খেজুর আঙ্গুর আপেল ইত্যাদিতে শর্করা বা গ্লুকোজ শাক-সবজি বেল তরমুজ থর ইত্যাদিতে সেলুলোজ; আম কলা কমলালেবু প্রভৃতি পাকা ফলে শর্করা বা ল্যাকটোজ এবং পাঁঠার যুকৃত ও পেশিতে গ্লাইকোজেন বা প্রাণীজো শ্বেতসার পাওয়া যায়।

শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এর কাজ কি এবং পুষ্টিগত গুরুত্ব বা কাজ

দেহে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তাপ শক্তি উৎপাদন শর্করার প্রধান কাজ। সেলুলোজ জাতীয় খাদ্য কষ্টোধ্যতা দূর করে। গ্লাইকোজেন যকৃত ও পেশিতে সঞ্চিত থাকে যা প্রয়োজনের সময় গ্লুকোজে পরিণত হয়ে দেহে অতিরিক্ত তাপ শক্তি উৎপাদন করে এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে। রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক পরিমাণ হলো প্রতি ১০০ মিলি দশমিক রক্তে ৮০থেকে ১২০ গ্রাম।

শর্করার প্রধান কাজ কি

মূলত শর্করার প্রধান কাজ হল আমাদের শরীরকে শক্তির যোগান দেওয়া। এবং এই শর্করা আমাদের প্রয়োজনীয় শক্তি জমা করে রাখে। আমাদের পেশির পরিমাণ এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ করতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে এই শর্করা। তাছাড়া আমাদের মস্তিষ্ককে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে কার্যকলাপ সঞ্চালন করতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট।

শর্করা আমাদের পেশির পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও শর্করার আরো বিভিন্ন রকম কাজ রয়েছে তা আমি উল্লেখ করার চেষ্টা করছি।

আমাদের শরীরে সাতটি পুষ্টির মধ্যে মূল হচ্ছে শর্করা শর্করা আমাদের শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে থাকে। এবং অতিরিক্ত পরিমাণে শরীরের ফ্যাট চর্বি অতিরিক্ত হলে তা জমিয়ে রাখে। শর্করার প্রধান কাজ কি এবং শর্করার উৎস গুলো কি আসুন জেনে নিই।


প্রাণিজ উৎস -
  • ল্যাক্টোজ বা দুধ শর্করা-গরু ছাগল ও অন্যান্য প্রাণীর দুধে থাকে এই শর্করা ।
  • গ্লাইকোজেন-পশুপাখি বিভিন্ন ধরনের পক্ষী জাতীয় প্রাণীর মাংসে থাকে গ্লাইকোজেন।
আসুন তাহলে এবার জেনে নিই শর্করার প্রধান কাজ কি ? শর্করার প্রধান কাজ হল আমাদের শরীরের শক্তি সরবরাহ করা। এবং শর্করা আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি জমা করে রাখে। আমি কিছু পয়েন্ট আকারে আপনাদের তুলে ধরার চেষ্টা করছি যে শর্করার প্রধান কাজ কি।

শক্তির উৎস : শর্করার প্রধান কাজ হল শরীরকে শক্তি সরবরাহ করা। আমাদের খাদ্যে থাকা শর্করা হজম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্লুকোজের রূপান্তরিত হয়, যা রক্তে মিশে শরীরের কোষে পৌঁছায়। কোষ গুলো এই গ্লুকোজ ব্যবহার করে এডেনোসেন্ট ট্রাই ফসফেট উৎপাদন করে, যা শরীরের প্রায় সব ধরনের ক্রিয়া-কলাপের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি হিসেবে কাজ করে।


মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বজায় রাখা : মস্তিষ্কের কোষগুলো গ্লুকোজ কে প্রধান জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে। একটি সুস্থ মস্তিষ্কের কার্যক্রম রাখার জন্য নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত গ্লুকোজ সরবরাহ গুরুত্বপূর্ণ। মস্তিষ্ক গ্লুকোজের ঘাটতিতে সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, যা একাগ্রতা মনোযোগ ও চিন্তা প্রক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আশা করছি বুঝতে পারছেন শর্করার প্রধান কাজ কি।

গ্লাইকোজেন হিসেবে শক্তি সঞ্চয়: শরীরের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনের বাইরে শর্করার অতিরিক্ত অংশ যকৃত ও পেশীতে গ্লাইকোজেন হিসেবে সঞ্চিত থাকে। যখন শরীরের গ্লুকোজের প্রয়োজন হয় তখন এই গ্লাইকোজেন গ্লুকোজে পরিণত হয়ে যায় এবং শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি বিশেষ করে তৎক্ষণাৎ শক্তি প্রয়োজনের সময়, যেমন অনাহারে বা দীর্ঘক্ষন অনুশীলনের সময় কার্যকর হয় এই প্রক্রিয়া।

প্রোটিন রক্ষায় ভূমিকা : যখন শরীরে পর্যাপ্ত শর্করা পাওয়া যায়, তখন শরীর তার প্রোটিনের মজুদ ব্যবহার করে না। প্রোটিন গুলো তখন শরীরের গঠনমূলক কাজ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জৈবিক কার্যক্রমে ব্যবহার হয়। তাই শর্করা প্রোটিন এর স্পিয়ারিং এফেক্ট হিসেবেও কাজ করে যা প্রোটিনের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করে।


চর্বি বিপাকে সহায়তা : শর্করার উপস্থিতি চর্বি-বিপাক প্রক্রিয়াকে সঠিকভাবে চালাতে সহায়তা করে। যদি পর্যাপ্ত শর্করা না থাকে, তবে চর্বির অসম্পূর্ণ অক্সিডেশন ঘটে, যার ফলে কিটন নামে ক্ষতিকর উপজাত তৈরি হয়। এটি শরীরের কিটোসিস সৃষ্টি করতে পারে। যা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়।

খাদ্যের স্বাদ ও সহজলভ্য শক্তি সরবরাহ করা : শর্করা খাদ্যের সাধ বৃদ্ধিতে অবদান রাখে এবং সহজেই বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে থাকে। এটি শরীরকে দ্রুত এবং কার্যকর ভাবে শক্তি প্রাপ্তিতে সাহায্য করে, যা দৈনন্দিন কাজে এবং শারীরিক পরিশ্রমে সহায়ক হতে পারে।

আশা করছি শর্করার প্রধান কাজ কি তা আপনারা খুব ভালোভাবে এই পর্যন্ত অবগত হতে পেরেছেন। আমি নিম্নে আরো সংক্ষিপ্তভাবে শর্করার প্রধান কাজ কি তা তুলে ধরছি।
  • শর্করা উদ্ভিদের সাপোর্টিং টিস্যু গঠনে ভূমিকা পালন করে।
  • শর্করা হাড়ের মধ্যস্থলে লুব্রিকেন্ট হিসেবেও কাজ করে থাকে।
  • শর্করা ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যামিনো এসিড বিপাকে সাহায্য করে।
  • শর্করা কেলভিন চক্র এবং ক্রেবস চক্রের মত গুরুত্বপূর্ণ চক্রে সাবলীলভাবে কার্বোহাইড্রেট এর মাধ্যমে অংশগ্রহণ করে থাকে।
  • শর্করা উদ্ভিদের দেহ গঠনকারী পদার্থ গুলোর কার্বন কাঠামো প্রদান করতে পারে।
  • শর্করা জীবদেহের শক্তির প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে।
  • শর্করা প্রাণী এবং ছত্রাক ব্যাকটেরিয়া গ্লাইকোজেন নামক কার্বোহাইড্রেট সঞ্চয় করে থাকে।
এছাড়াও শর্করার প্রধান কাজ কি এ বিষয়ে আলোকপাত করতে গেলে গুনে গুনে শেষ করা সম্ভব হবে না আরও বিভিন্ন রকম ভাবে শর্করা মানব দেহ এবং প্রাণীদেহে ভূমিকা পালন করে থাকে।

দৈনন্দিন জীবনের শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট আমাদের শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শক্তির সরবরাহের প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে, যা আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমের সঠিকভাবে অংশগ্রহণ করতে সহায়ক হয়।

দ্রুত শক্তি সরবরাহ

শর্করা আমাদের খাদ্যে সহজলভ্য শক্তি সরবরাহ করে, যা আমাদের দৈনন্দিন কাজ, হাঁটাচলা, অফিসের কাজ বা অন্যান্য শারীরিক পরিশ্রমে সাহায্য করে থাকে। আমাদের শরীর খাদ্যের শর্করাকে গ্লুকোজ এ পরিণত করে, যা রক্তের মাধ্যমে কোষে পৌঁছায় এবং শক্তি উৎপন্ন করে। এ শক্তি দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় শরীরকে সচল রাখে। শর্করার প্রধান কাজ কি নিচে আরও উল্লেখ করা হলো।

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বজায় রাখা

শর্করা মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মস্তিষ্কের কোষ গ্লুকোজ কে প্রধান জালানো হিসেবে ব্যবহার করে। সকালে নাস্তায় শর্করাযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে মস্তিষ্ক সজাগ থাকে এবং একাগ্রতা বাড়ে। শর্করার অভাবে ক্লান্তি মাথা ঘোরা এবং মনোযোগ বিঘ্ন ঘটতে পারে।

শক্তি সংরক্ষণ

অতিরিক্ত শর্করা গ্লাইকোজেন হিসেবে যকৃত ও পেশীতে সংরক্ষিত হয়। এই গ্লাইকোজেন শরীরের অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন মেটায়, বিশেষ করে দীর্ঘ সময় না খেলে বা শারীরিক অনুশীলনের সময়ে শক্তির ঘাটতি পূরণে সাহায্য করতে পারে। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে শক্তি সরবরাহ করে।

পেশির কার্যক্রমে সহায়তা

শর্করা আমাদের পেশিকে শক্তি প্রদান করে, যা দৈনন্দিন কাজ ও অনুশীলনের সময় শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। যখন শারীরিক কাজ করতে হয় বা ভারি কিছু বহন করতে হয় তখন শর্করা থেকে উৎপন্ন থাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।

প্রোটিনের সংরক্ষণ করে

দৈনন্দিন জীবনে পর্যাপ্ত শর্করা গ্রহণ শরীরের প্রোটিনকে শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হতে বাধা দেয়। প্রোটিন তখন শরীরের পেশী গঠন ও কোষ মেরামতের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারে। এটি শরীরকে স্বাস্থ্যবান রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

হরমোন ও রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা

শর্করা শরীরে বিভিন্ন হরমোন উৎপাদনও সাহায্য করে। এটি ইনসুলিনের নির্গমনের সহায়তা করে যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। শর্করার প্রয়োজনীয় পরিমাণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সক্রিয় রাখে যা দৈনন্দিন জীবনে সুস্থ থাকতে যথেষ্ট সাহায্য করে।


তো প্রিয় পাঠক বৃন্দ আশা করছি আপনি শর্করার প্রধান কাজ কি এবং শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এর কাজ কি তা ভালো করে বুঝতে পেরেছেন বা আমি বোঝাতে পেরেছি। যদি ভালো লাগে তো অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধবদের কাছে শেয়ার করে তাদের জানার সুযোগ করে দিবেন ধন্যবাদ।

লেখক এর কথা

দৈনন্দিন জীবনের শর্করা শক্তির প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করে। তাই স্বাস্থ্যকর খাবার থেকে সঠিক পরিমাণের শর্করা গ্রহণ করা উচিত যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে কার্যকরী ও সুস্থ রাখে।আশা করছি এই এক কথার মাধ্যমে আপনাকে বোঝাতে পেরেছি শর্করার প্রধান কাজ কি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url