*/

দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমানোর উপায়

দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমানোর উপায় এবং হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় কি ? শ্বাসকষ্ট একটি জটিল ধরনের শারীরিক সমস্যা। যখন শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পায় তখন একজন ব্যক্তির খুব মারাত্মক কষ্ট অনুভব হয়। শ্বাসকষ্টের মানে হচ্ছে শ্বাসনালী দিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে বাতাস অথবা অক্সিজেন প্রবেশ না করা। আর তাই দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমানোর উপায় এবং হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় কি তা নিয়ে থাকছে বিস্তারিত।
দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমানোর উপায়

শ্বাসকষ্ট আসলে কি

শ্বাসকষ্ট একটি সাধারণ ঘটনা বলা যেতে পারে যা কয়েক মিনিটের মধ্যে ভালো হয়ে যেতে পারে। তবে যদি এটি দৈনন্দিন জীবনে মানুষের বিভিন্ন কাজে-কর্মে বাধা সৃষ্টি করে অথবা জীবন মানে অবনতি ঘটায় তাহলে অবশ্যই আপনাকে একজন ভালো ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে অনেক সময় শ্বাসকষ্ট হতে পারে। আর এ কারণেই আমাদের জানতে হবে দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমানোর উপায়।


শ্বাসকষ্ট মূলত সৃষ্টি হয়, হৃদপিন্ডের, ফুসফুসের সমস্যা, এলার্জি, হাঁপানি, অথবা যক্ষা ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যার কারণে শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। তাছাড়া শরীরে যদি কোন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয় সেক্ষেত্রেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। শ্বাসকষ্টের অনেক রোগীকে দেখা গেছে রাত্রে ঠিকভাবে ঘুম না হবার কারণে শ্বাসকষ্ট অথবা শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। নিউমোনিয়া হলে শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি হতে পারে। কেননা নিউমোনিয়া ফুসফুসে আক্রমণ করে এবং ফুসফুস যত বেশি আক্রান্ত হবে শ্বাসকষ্ট তত বেশি প্রভাবিত হবে।

দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমানোর উপায়

শ্বাসকষ্ট রোগ এদের জন্য শ্বাসকষ্ট খুব স্বাভাবিক ব্যাপার হলেও তাৎক্ষণিকভাবে এটি কমানো খুবই দরকার। কেননা শ্বাসকষ্টের রোগীদের শ্বাসনালী সংকুচিত হয়ে যায় এবং শ্বাস নিতে অনেক বেশি কষ্ট হয়। প্রাথমিকভাবে দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমানোর উপায় হল, কোন দেওয়ালের বিপরীতে দাঁড়িয়ে শাসনালী শিথিল করার চেষ্টা করা অর্থাৎ, দেয়ালে দুই হাত দিয়ে সামনের দিকে একটু ঝুঁকে থাকা।

চেয়ার বা টেবিলে একটি সাপোর্ট নিয়ে টেবিলে মাথা দিয়ে ঝুঁকে থাকা। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কফি পান শ্বাসনালী খুলতে সাহায্য করে থাকে। দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে এটি একটি খুবই কার্যকরী উপায়। এছাড়াও বালিশ উঁচু করে রোগীকে ঘাড় বরাবর বালিশ রেখে শুইয়ে দিতে হবে তাহলে শ্বাসকষ্ট কিছুটা কমতে থাকবে।

দেয়াল থেকে এক ফুট দূরে পা রেখে এরপর শরীরটা দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ালে শ্বাসকষ্ট অনেকটা কমতে পারে। এগুলো শুধুমাত্র দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমানোর উপায় এর প্রাথমিক পর্যায়। যদি রোগী খুব সিরিয়াস কন্ডিশনে থাকে তাহলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।


ইনহেলার নেওয়া, শ্বাসকষ্ট রোগীদের বেশিরভাগ সময় ইনহেলার গ্রহণ করতে হয়। ইনহেলার হলো এমন এক পদার্থ বা ঔষধ যা শ্বাসনালীতে জমে থাকা ঘনশ্লেষ্মা তরল করে শ্বাসকার্যের বাধা দূর করে দেয়। দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে এটি একটি খুবই কার্যকরী উপায়। আপনার হাতে যদি ইনহেলার থাকে রোগীকে সাথে সাথে একটি ইনহেলার দিয়ে দিন।

শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে হলুদ একটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে হলুদ খাওয়া অন্যতম। অর্থাৎ আপনি দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে পান করলে আপনার অনেকটা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা দূর করবে এই হলুদ। হলুদের রয়েছে হিস্টামিন এবং কার্কিউমেন যা এলার্জির প্রতিক্রিয়া হিসেবে কাজ করে।

শ্বাসকষ্ট রোগীদের হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে করণীয়, শ্বাসকষ্ট রোগীদের দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমানোর জন্য নেবুলাইজ করা যেতে পারে। এটি করা হয় খুব সিরিয়াস কন্ডিশনের রোগীদের। তবে দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে এই নেবুলাইজ করা খুবই কার্যকরী একটি উপায়। তবে শ্বাসকষ্ট যেমাত্র নারী হোক না কেন, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো দরকার।

কোন ধরনের অসুখ থাকলে শ্বাসকষ্ট হয় 

সাধারণ সর্দি কাশি এবং জ্বরের মধ্যেও কিন্তু শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এছাড়াও সাইনোসাইটিস থাকলেও শ্বাসকষ্ট বাড়তে পারে। আর এক্ষেত্রে ফুসফুস শ্বাসকষ্টের জন্য দায়ী থাকে না। নিচে কিছু রোগ সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করলাম যেগুলা থাকলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

ফুসফুস জনিত সমস্যা যেমন, যদি কোন কারনে ফুসফুসে পানি জমে থাকে তাহলে শ্বাসকষ্ট সমস্যা দেখা দেয়।
  • হৃদ যন্ত্রের কার্যকারিতা কমে গেলে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
  • হাঁপানি থাকলে এবং ব্রংকাইটিসের সমস্যা থাকলে ফুসফুসে সমস্যা তৈরি হয় এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
  • অ্যাজমা থাকলে শ্বাসকষ্ট অবধারিত হবেই।
  • অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ফুসফুসের ছোট রক্তনালীর রক্ত জমাট বেঁধে গেলেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ যেমন ডায়াবেটিস, হাঁপানি, অ্যাজমা এর সমস্ত অশোকগুলো রক্তে এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি করে শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করতে পারে।

শীতকালে শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে করণীয়

শীতকালে শ্বাসকষ্ট রোগীদের বেশ সচেতন ভাবে চলাফেরা করতে হবে, বিশেষ করে যারা বাইরে চলাফেরা করেন তারা অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা যেমন ঈমানের অঙ্গ, শ্বাসকষ্ট রোগীদের ক্ষেত্রে জামা কাপড় এবং, বসবাস করা ঘর অথবা রুম সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। বিশেষ করে যে সকল মানুষদের ধূমপানের অভ্যাস রয়েছে আপনি যদি তাদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট রোগী হন অবশ্যই আপনাকে ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।


শ্বাসকষ্ট রোগীদের জন্য আদা খুব উপকারী জিনিস। আপনি শীতকালে শ্বাসনালের প্রদাহ কমানোর জন্য বা অক্সিজেন স্বাভাবিক রাখার জন্য কাঁচা আদা চিবিয়ে খেতে পারেন, অথবা চায়ের সাথে মধু মিশিয়ে আদা খেতে পারেন এক্ষেত্রে বেশ উপকার পাবেন।

দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে সরিষার তেল খুবই কার্যকরী একটি উপাদান, সরিষার তেল গরম করে, গলায় মাখতে পারেন পিঠে মাখতে পারেন অথবা আপনার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ভালোভাবে মাসাজ করতে পারেন বিশেষ করে পায়ের তালু এবং হাতের তালুতে।

শ্বাসকষ্টের কিছু কারণ

বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখ হতে পারে জটিল অসুখ অথবা জন্ম থেকেও একজন মানুষের শ্বাসকষ্ট হতে পারে। শ্বাসকষ্ট অসুখ বয়স লিঙ্গ এসব ভেদাভেদ করে না যেকোনো সময় যে কোন বয়সে যে কারো ব্যক্তিরি হতে পারে। নিচে আমি কিছু শ্বাসকষ্টের কারণ উল্লেখ করার চেষ্টা করছি।
  • হৃদ যন্ত্রের সমস্যা বা জটিলতা
  • ফুসফুসে সমস্যা অথবা কোন প্রদাহ বা তরল জমা হওয়া
  • নিউমোনিয়াজনিত অসুখ
  • হাঁপানি
  • এলার্জি
  • যক্ষা
  • ফুসফুসের ক্যান্সার
  • স্বাসতন্ত্রের অস্বাভাবিকতা বা অসুস্থতা
  • শরীরে ব্যাকটেরিয়ার অনুপ্রবেশ
  • ভাইরাসজনিত সমস্যা বা ভাইরাস অ্যাটাক
  • অতিরিক্ত ধূমপান করা
  • বিভিন্ন ধরনের নেশাদ্রব্য সেবন
  • মানসিক দুশ্চিন্তা
  • অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম ইত্যাদি
এছাড়াও বিভিন্ন কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। বিভিন্ন ধরনের ধুলোবালি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে, মাদকদ্রব্য সেবন যেমন ধূমপান করা আরো বিভিন্ন ধরনের মাদক সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে।


সর্বোপরি একটা কথা বলা ভালো, শ্বাসকষ্ট আসলে কোন রোগ নয়, এটি বিভিন্ন ধরনের সমস্যার উপসর্গ মাত্র। আর তাই শ্বাসকষ্ট যে মাত্রারই হোক না কেন অবশ্যই রোগীকে বা আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়াটা খুবই জরুরী। ঘন ঘন শ্বাস ওঠা নামা করা দমবন্ধ হলে বুক চেপে ধরলে সাধারণত শ্বাসকষ্ট বলে আমরা চিহ্নিত করে থাকি। শ্বাসকষ্ট আসলে কোন রোগ নয়, ফুসফুসের বিভিন্ন জটিলতার একটি উপসর্গ। আর তাই শ্বাসকষ্ট রোগীদের খুব গুরুতর চিকিৎসার প্রয়োজন।

লেখক এর কথা

পাঠক বন্ধু আশা করছি দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমানোর উপায় সম্পর্কে অথবা হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় কি এ ব্যাপারে আপনাকে একটি ছোটখাট ধারণা দিতে পেরেছি। আর্টিকেলটি যদি কোথাও ভুল মনে করে থাকেন তাহলে ক্ষমা সুযোগ দৃষ্টিতে দেখবেন। কারণ আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তা পাবলিশ করে থাকি। আপনাদেরই উপকারের স্বার্থে।

এরকম আরও বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল পড়তে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করবেন। এবং অবশ্যই শ্বাসকষ্ট রোগীদের মাঝে মাঝে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন। শ্বাসকষ্ট যদি দ্রুত না কমানো যায় সে ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনারা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। কেননা শ্বাসকষ্ট এর কারণে মানুষের জীবনে চলে যেতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url