ইলন মাস্ক এর জীবন কাহিনী - সফলতার পেছনে অজানা গল্প
ইলন মাস্ক এর জীবন কাহিনী জানুন আজকের ব্লগে।একজন স্বপ্নবাজ প্রযুক্তিবিদের ছোটবেলা থেকে স্পেসএক্স, টেসলা এবং অন্যান্য উদ্ভাবনের পেছনের প্রেরণাদায়ী গল্প।
ইলন মাস্ক এর জীবন কাহিনী, স্বপ্ন, সংগ্রাম আর সাফল্যের এক গল্প
ইলন মাস্ক, এই নামটা আমরা আজ অনেকেই জানি। টেসলা, স্পেসএক্স, নিউরালিংক সবকিছুর পেছনে যে মানুষটা আছেন, তিনিই ইলন মাস্ক।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার
কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে, ইলন মাস্ক এর জীবন কাহিনী আসলে কতটা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে। ছোটবেলায় যে ছেলেটা একা একা বই পড়ে সময় কাটাতো, সেই ছেলেই আজ পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা।
একজন নিরিবিলি ছেলেকে নিয়ে গল্পের শুরু
ইলনের জন্ম ১৯৭১ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়াতে। বাবা ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার, মা ছিলেন মডেল আর ডায়েটিশিয়ান। ছোট থেকেই খুব চুপচাপ আর অন্তর্মুখী ছিলেন ইলন।
বন্ধুদের সাথে খেলাধুলার চেয়ে বইয়ের পাতায় ডুবে থাকতেই বেশি ভালো লাগত তার। মাত্র ১২ বছর বয়সে নিজের তৈরি করা একটা গেম বিক্রি করেছিলেন ৫০০ ডলারে ভাবা যায়?
এই ছোট্ট ঘটনার মধ্যেই আমরা দেখতে পাই ইলন মাস্ক এর জীবন কাহিনী কীভাবে ভবিষ্যতের ধনকুব হবার ইশারা দিচ্ছিলো।
বিদেশে পাড়ি আর পড়াশোনার গল্প
১৯৮৯ সালে তিনি কানাডা চলে যান পড়াশোনার জন্য। তারপর পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। পড়েছেন ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়াতে। পদার্থবিজ্ঞান আর ইকোনমিক্সে ডিগ্রি নিয়েছেন।
পরে পিএইচডি শুরু করেছিলেন স্ট্যানফোর্ডে, কিন্তু মাত্র দুই দিনেই ছেড়ে দেন। কারণ, তখন ইন্টারনেট দুনিয়া ছিল নতুন আর অজানা এক জগত সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়াই মনে করেছিলেন ঠিক সিদ্ধান্ত।
আরো পড়ুন: রয়েল এনফিল্ড কেন এত জনপ্রিয়
এই সময়টা ছিল ইলন মাস্ক এর জীবন কাহিনী-র এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়, যেখানে তিনি নিরাপদ চাকরি বা উচ্চতর ডিগ্রির পেছনে না ছুটে, নিজের স্বপ্নের পেছনে ছুটেছিলেন।
Zip2 থেকে শুরু
তাঁর প্রথম বড় উদ্যোগ ছিল Zip2, যেখানে লোকাল বিজনেসের জন্য অনলাইন গাইড বানানো হয়েছিল। প্রথমে অনেকেই গুরুত্ব দেননি, কিন্তু ধীরে ধীরে কোম্পানিটা সফল হয়।
পরে Compaq এই কোম্পানিটা কিনে নেয় বিশাল অঙ্কের অর্থে। তখন ইলন মাস্ক ছিলেন মাত্র ২৮ বছর বয়সী।
এই পর্বে এসে আমরা বুঝি ইলন মাস্ক এর জীবন কাহিনী কেবল সাফল্যের নয়, সাহস নিয়ে নতুন কিছু শুরু করার গল্পও বটে।
PayPal ডিজিটাল লেনদেনের ভবিষ্যৎ
এরপর শুরু করেন X.com, যা পরবর্তীতে PayPal হয়ে ওঠে। অনলাইনে টাকা পাঠানো, কেনাকাটা সবকিছু এত সহজ করে দিয়েছিল যে,
আজকের দিনে তার প্রভাব আমরা প্রতিদিনই অনুভব করি। পরে eBay এই প্রতিষ্ঠানটা কিনে নেয়, আর ইলন হয়ে ওঠেন মিলিয়নিয়ার।
এই ধাপে ইলন মাস্ক এর জীবন কাহিনী এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়, যেখানে তিনি প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে মানুষের জীবন বদলাতে শুরু করেন।
SpaceX মহাকাশে মানুষের বসবাস সম্ভব
২০০২ সালে ইলন প্রতিষ্ঠা করেন SpaceX। শুরুতে অনেকে হাসাহাসি করলেও, তিনি থেমে যাননি। প্রথম তিনটা রকেট উৎক্ষেপণ ব্যর্থ হয়েছিল।
আরো পড়ুন: ২০ হাজার টাকার মধ্যে সেরা গেমিং ফোন
চতুর্থটাও যদি ব্যর্থ হতো, কোম্পানি হয়তো বন্ধই হয়ে যেত। কিন্তু সেই চতুর্থবারে সফল হন, আর সেখান থেকেই শুরু হয় এক নতুন যুগের।
এই জায়গাটায় এসে ইলন মাস্ক এর জীবন কাহিনী রূপকথার মতো মনে হয় যেখানে শেষ মুহূর্তেও একজন লড়াই চালিয়ে যান, আর সাফল্য ধরা দেয়।
Tesla গাড়ি নিয়ে ভবিষ্যতের ভাবনা
ইলনের সবচেয়ে আলোচিত উদ্যোগ হয়তো Tesla। তিনি চেয়েছিলেন এমন গাড়ি বানাতে, যা শুধু বিলাসবহুল নয়, পরিবেশবান্ধবও হবে।
প্রথমে কেউ বিশ্বাস করেনি যে বৈদ্যুতিক গাড়ির এত বাজার হবে, কিন্তু আজ Tesla এর গাড়িই সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন ইভি (EV) গাড়ি।
এখানে ইলন মাস্ক এর জীবন কাহিনী আমাদের শেখায়, সময়ের চেয়ে কয়েক কদম এগিয়ে ভাবলেই বদলে যায় নিয়ম।
আরো কিছু পাগলাটে ভাবনা Neuralink, Boring Company, OpenAI
ইলন থেমে থাকেননি। মানুষের মস্তিষ্ক আর কম্পিউটারের সংযোগ ঘটাতে চান Neuralink-এর মাধ্যমে। আবার শহরের নিচ দিয়ে টানেল বানিয়ে জ্যামমুক্ত পরিবহনব্যবস্থা গড়তে চান
Boring Company দিয়ে। এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিরাপদ রাখতে OpenAI-এর মতো সংস্থাও গড়েছেন।
এই সবকিছুই দেখায়, ইলন মাস্ক এর জীবন কাহিনী শুধু টাকার পেছনে ছোটা নয় বরং ভবিষ্যতের জন্য চিন্তা করা এক মানুষের জীবন।
ব্যক্তিগত জীবন ও বিতর্ক
ইলনের ব্যক্তিগত জীবন নানা সময় বিতর্কে এসেছে বিভিন্ন সম্পর্কে, টুইটারে মন্তব্য, কর্মীদের নিয়ে বিতর্ক ইত্যাদি। তবে এতকিছুর মধ্যেও তিনি প্রতিদিন কাজ করে যাচ্ছেন, নতুন কিছু তৈরি করে যাচ্ছেন।
এত ঝড়ঝাপটার মধ্যেও যে মানুষটা দাঁড়িয়ে থাকেন, তার নাম ইলন মাস্ক। ইলন মাস্ক এর জীবন কাহিনী পড়লে সত্যিই আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি।
আপনি যে কাজ ভালোবাসেন সেটার ওপর লেগে থাকা
আপনাকে নিয়ে যেতে পারে অনেক দূর। অনেক ভাবে তিনি বিতর্কিত হয়েছেন কিন্তু হাল ছেড়ে দেন নি, তার এই জেদ ই তাকে আজ এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে।
ইলন মাস্ক কত টাকার মালিক
চলতি বছরের তথ্য অনুযায়ী এপ্রিল মাস 2025 সালে ইলন মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ৩৪০.৪ চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
আরো পড়ুন: ঘরে বসে আয় করুন লাখ টাকা
২০২৫ সালের শুরুতে ইলন মাস্কের সম্পদ প্রায় ৪৩৩.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছে গেছিলো, যা বিশ্বের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৪০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
তবে টেসলার শেয়ার মূল্যের পতন এবং বৈশ্বিক ev বাজারের মন্দার কারণে তার সম্পদ কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় প্রথম ইলন মাস্ক। যার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩৪০. ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তার এই সম্পদের প্রধান উৎস হল টেসলা, স্পেস এক্স,XAI এবং সাবেক টুইটার বর্তমানেX। সাম্প্রতিক বাজার পরিবর্তনের কারণে তার সম্পদ কিছুটা হ্রাস পেলেও বর্তমানে ধনীদের শীর্ষস্থানেই অবস্থান করছেন ইলন মাস্ক।
লেখকের মন্তব্য
আমি খুব সংক্ষেপে ইলন মাস্ক এর জীবন কাহিনী এবং তার সম্পদ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ইলন মাস্ক এমন একজন মানুষ, যিনি শুধু স্বপ্ন দেখেন নি, সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপও দিয়েছেন। তার কাজ, চিন্তা আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি আমাদেরও উৎসাহ দেয়।
সে ছাত্র হোক, উদ্যোক্তা হোক, বা স্বপ্নদ্রষ্টা, ইলন মাস্ক এর জীবন কাহিনী সবাইকে একটা বার্তা দেয় চেষ্টা করলে, বিশ্বাস রাখলে আর ভয় না পেলে, কোনো কিছুই অসম্ভব না।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url